রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন
খুলনা প্রতিনিধি: সুন্দরবনে পর্যটকদের হাতছানি দিচ্ছে খুলনার কয়রা উপজেলা সদরে ৪ নং কয়রা লঞ্চঘাট সংলগ্ন কাশিয়াবাদের নয়নাভিরাম সুন্দরবন।চোখ জুড়ানো, শিহরন জাগানো অরণ্য কয়রার কাশিয়াবাদ সুন্দরবন। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সুন্দরবন। ম্যানগ্রোভ, গোলপাতার সুন্দরবন। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করে তুলবে কাশিয়াবাদ সুন্দরবন। সম্প্রতি বন বিভাগের পক্ষ থেকে নতুন দুটি পর্যটনকেন্দ্র চালু করা হয়েছে।সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের আওতাধীন খুলনা রেঞ্জের কালাবগী; পূর্ব বন বিভাগের আওতাধীন চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিকে ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। কাশিরাবাদ ৪ নং কয়রা লঞ্চঘাট সংলগ্ন সুন্দরবন এলাকায় একটি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে সহজেই পর্যটকদের নাগালের মধ্যে চলে আসবে বিশ্ববিখ্যাত সুন্দরবন।উপজেলা সদরে হওয়ায় যাতায়াত পাশাপাশি অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাবে ভ্রমণপিপাসু মানুষ।খুলনা শহর হতে সড়ক ও নৌপথে সহজে পর্যটনকেন্দ্রে আসতে পারবে।
কয়রা সদরের কাশিয়াবাদের ৪ নং কয়রায় বন্যপ্রাণী আর নানা জাতের বৃক্ষরাজি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে আধুনিক পদ্ধতিতে কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হলে পর্যটকদের মনোমুগ্ধ করবে। । ফলে সরকার যেমন বড় অঙ্কের রাজস্ব পাবে, তেমনি বদলে যাবে এ অঞ্চলের অর্থনীতি।কয়রা উপজেলায় ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। সরেজমিনে কাশিয়াবাদ ৪ নং কয়রা লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন জেলার ভ্রমণপিপাসুদের পাশাপাশি শতাধিক লোকজনের উপস্থিতি।লঞ্চঘাটের পাশে গড়ে উঠেছে একটি আধুনিক কাফেটেরিয়া। নদীতে ভ্রমণের জন্য কম খরচে নৌকা,ইঞ্জিন চালিত বোট ভাড়া পাওয়া যায়।এলাকার মানুষ পর্যটকদের প্রতি অনেক আন্তরিক ও বিনয়ী।শাকবাড়িয়া নদীর পশ্চিম ও দক্ষিণপাশে লোকালয়,পূর্ব ও উত্তর পাশে মায়াবী সুন্দরবন।যতদূর চোখ যায় তত দূর সুন্দরবন।নদী ও বনের মায়া যে কাউকে প্রেমে ফেলবে।
স্থানীয় গ্রামের কয়েকজন জেলে জানান, কাশিয়াবাদ সুন্দরবনে সুন্দরী, গরান, কেওড়া, গেউয়া, পশুর, গোলপাতাসহ অসংখ্য প্রজাতির বৃক্ষের দেখা মেলে। পৃথিবী বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার,হরিণ সহ নানা প্রজাতির পশু পাখির বসবাস এখানে।নদীতে কুমির ও শুশকসহ নানা প্রজাতির মাছ দেখা যায়।এছাড়া সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থল প্রাণী বাস করে,প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, আট প্রজাতির উভচর এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী। রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়া সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, রেসাল বানর, বনবিড়াল, শজারু, উদ এবং বন্য শূকর। প্রায় ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপের মধ্যে সুন্দরবনের সবচেয়ে বড় সদস্য মোহনার কুমির, এদের সংখ্যা প্রায় ২০০। সাপের মধ্যে রাজ গোখরা, অজগর কেউটে এবং কয়েক প্রজাতির সামুদ্রিক সাপ উল্লেখযোগ্য।
কয়রার সামাজিক সাংস্কৃতিক জাগরণে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলা এবং সমস্যা সংকটে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মোহসিন রেজা বলেন,৪ নং কয়রায় সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ হলে আমাদের দেশের পর্যটন শিল্পকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে কয়রা পর্যটন কেন্দ্র।যা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখবে এবং অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।খুলনা -৬ আসনের সংসদ সদস্য মো:রশিদুজ্জামান উপজেলায় ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র করার জন্য সর্বোচ্চ কাজ করে যাচ্ছেন।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলি বিশ্বাস জানান,কাশিয়াবাদ ৪ নং কয়রা লঞ্চঘাট এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত সুন্দরবন হতে পারে পর্যটন শিল্পের জন্য অপার সম্ভাবনাময় ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র।লজিক প্রকল্পের আওতায় এখানে কিছু কাজ হওয়ার কথা ছিল।ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ে উঠলে অর্থনৈতিকভাবে কয়রার মানুষ অনেক উপকৃত হবে, সৃষ্টি হবে অনেক কর্মসংস্থানের।অর্থনৈতিক খাতকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে কাশিয়াবাদ ইকোট্যুরিজন কেন্দ্র।